ঢাকা,শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

রাষ্ট্রদ্রোহসহ ৫ মামলায় খালেদার জামিন

2016_04_05_10_46_00_iL2Ouy78g6jQWMe0q77O6KFWCGHRAd_original_1বাংলামেইল :

রাষ্ট্রদ্রোহ, গ্যাটকো দুর্নীতি, যাত্রাবাড়ীতে পেট্রোল বোমা বিস্ফোরণের দুই মামলা এবং গুলশানে নৌপরিবহনমন্ত্রীর মিছিলে পেট্রোলবোমা হামলাসহ পাঁচ মামলায় জামিন পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

মঙ্গলবার (০৫ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত একে একে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত ও মুখ্য মহানগর আদালতের পাঁচ বিচারকের সামনে হাজিরা দিয়ে জামিন আবেদন করেন বেগম জিয়া। এসময় বেগম জিয়ার করা আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই ৫ মামলায় ধারাবাহিক জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।

যাত্রাবাড়ীর দুই মামলা

প্রথমেই যাত্রাবাড়ী থানার পেট্রোল বোমায় মানুষ পুড়িয়ে হত্যা ও দগ্ধ হওয়ার বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদনের প্রেক্ষিতে জামিন পান বিএনপি চেয়ারপারসন। শুনানি শেষে মহানগর দায়রা জজ (১ নম্বর মহানগর বিশেষ ট্রাইবুনাল) কামরুল হোসেন মোল্লা বেগম জিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন। উল্লেখ্য, গত বছরের ২৩ জানুয়ারি রাতে যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় গ্লোরি পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে বাসের ২৯ যাত্রী দগ্ধ হন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হলে ১ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নূর আলম নামের এক যাত্রী। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কে এম নুরুজ্জামান গত বছরের ২৪ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫/২৫(ঘ) ধারায় যাত্রাবাড়ী থানায় দুটি মামলা করেন। মামলায় পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের পরিকল্পনাকারী হিসেবে বিএনপির ১৮ নেতার নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী হিসেবে যাত্রাবাড়ী বিএনপির ৫০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।

গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা

এ মামলার শুনানি শেষে একই ভবনের ছয় তলায় বিশেষ জজ আদালতে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় জামিন আবেদন করেন খালেদা। এসময় শুনানি শেষে বিচারক আবু আহমেদ জমাদার এক লাখ টাকা মুচলেকায় বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন মঞ্জুর করেন। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ১৩ মে ওই মামলায় খালেদাসহ জোট সরকারের প্রভাবশালী ৯ সাবেক মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীসহ মোট ২৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল হয়। চার্জশিট দাখিল হওয়ার পর থেকেই উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলার কার্যক্রম স্থগিত হয়। ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার দুটি রিট আবেদন খারিজ করে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। সে অনুয়ায়ী আগামী ১৩ এপ্রিলের মধ্যে ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে মামলাটিতে আত্মসমর্পণের জন্য তার বিরুদ্ধে সমন জারি রয়েছে।

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

গ্যাটকো শুনানির পর মুখ্য মহানগর আদালতে নাশকতার আরো দুটি এবং রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন জানালে মহানগর হাকিম রাশেদুল তালুকদার উল্লিখিত মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু ও শহীদদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গত ২৫ জানুয়ারি ঢাকা সিএমএম আদালতে একটি মামলা হয়। ওই মামলায় ৩ মার্চ খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির হতে সমন দেয়া হয়। কিন্তু ওইদিন তার পক্ষে সময় চাওয়ায় ১০ এপ্রিল তাকে আদালতে হাজির হতে সমন প্রদান করেন আদালত। ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিশন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু ও শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন বেগম জিয়া।

গুলশানে বোমা মামলা

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার শুনানি শেষে গুলশানে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের মিছিলে পেট্রোলবোমা হামলার ঘটনায় খালেদাকে হুকুমের আসামি করে দায়েরকৃত মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন জানালে আদালত বেগম জিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন। ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. কায়সার উল ইসলাম মামলার শুনানি শেষে এ জামিন মঞ্জুর করেন। এসময় খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন।

উল্লেখ্য, বিএনপির লাগাতার হরতাল-অবরোধের প্রতিবাদে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে শ্রমিক-কর্মচারী-পেশাজীবী-মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের একটি মিছিল গতবছর ১২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বাসা ঘেরাওয়ের জন্য গেলে গুলশানের মেট্রোপলিটন শপিংমলের ওপর থেকে ৬-৭টি বোমা ফেলা হয়; আহত হন অন্তত ১১ জন। ওই ঘটনার চারদিন পর সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতা ইসমাইল হোসেন বাচ্চু গুলশান থানায় মামলা করেন। এজাহারে এক নম্বর আসামি ও বোমা হামলার মদদদাতা হিসেবে রাখা হয় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাম। এছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহাবুব হোসেন, দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ, খালেদার প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ আরও ১৪ নেতাকর্মীকে এ মামলায় আসামি করা হয়।

পাঠকের মতামত: